বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাতায়াত বাড়াতে পঞ্চাশ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া সড়ক যোগাযোগের পথগুলো খুলে দেয়ার পক্ষে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভারত ভাগের পর এসব পথ চালু থাকলেও ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার যুদ্ধের পর এগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
ভারত ভাগের আগে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের সঙ্গে পাশের এলাকাগুলো সড়ক, রেল ও নৌপথে সংযুক্ত ছিলো। আর এই যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু ছিল ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের আগে পর্যন্ত।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নৌপথে সীমিত কিছু যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা হলেও সড়ক আর রেলপথে যোগাযোগ আবার চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে।
মেঘালয়ের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সাল পূর্ববর্তী অবস্থার মতো যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, আর এক্ষেত্রে জোর দেন সড়ক যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠার ওপর।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের কাজে চারদেশীয় সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরির যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, মূলত তার আওতায়, অন্য দুই অংশীদার হলো ভূটান ও নেপাল।
এই উদ্যোগের সমন্বয়ক আবদুল মালেক বলছেন প্রস্তাবনাগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।
”এর সাথে কিছু লিগ্যাল ডকুমেন্ট তৈরির ব্যাপার আছে, সেগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে। কিন্তু এখনো সুনির্দিষ্টভাবে ঠিক করা হয়নি।”
”ভারত একটি ট্রায়াল করেছে কার্গো নিয়ে। আমরা আরেকটি ট্রায়াল করার চিন্তা-ভাবনা করছি মোংলা থেকে শুরু করে বুড়িমারী পয়েন্ট দিয়ে ভারত হয়ে ভূটান পর্যন্ত। দেশগুলোর সঙ্গে যখন প্রটোকল স্বাক্ষরিত হবে, তখন আমরা বলতে পারবো কতগুলো রুট আমরা গ্রহণ করলাম।”
সব মিলিয়ে বড় সম্ভাবনা আছে এটাকে উইন-উইন করার, অর্থনৈতিকভাবেও উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে অনেকদিন ধরে বিতর্ক থাকলেও দুটো দেশই অবশ্য এখন পরস্পরের সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আগ্রহী।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৯০ ভাগ বাণিজ্য হয় স্থলবন্দরের মাধ্যমে।
”কিন্তু এখানে অনেক সময়ের অপচয় হয়, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন রপ্তানীকারক-আমদানীকারক সবাই। আর খেসারত দিতে হয় ভোক্তাদেরও। সুতরাং সব মিলিয়ে বড় সম্ভাবনা আছে এটাকে উইন-উইন করার, অর্থনৈতিকভাবেও উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
ড. রহমান অবশ্য মনে করেন, এক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে, আর নজর দিতে হবে মাশুল আদায় ও নিরাপত্তার দিকে।
অন্যদিকে, মি. মালেক জানান, এই অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ হবে সিমলেস, অর্থাৎ সীমান্তে যানবাহন পরিবর্তন করতে হবে না।